1. rowshonsavar@gmail.com : admin2021 :
  2. rowshonsavar@gmail.com : Rowshon Ali : Rowshon Ali
April 19, 2024, 6:24 am

আয়ের চেয়ে ব্যয় চার গুণ

  • আপডেট টাইম : Friday, April 6, 2018
  • 174

বাংলা ফটো নিউজ : ইংরেজি ভাষায় বহুলপ্রচলিত কথা আছে- ‘Cut your coat according to your cloth.’- আয় বুঝে ব্যয় করো। অর্থনীতির যথার্থ নীতি। কিন্তু বাংলাদেশে তা সম্ভব হয় না ৯০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে। বাকি ১০ শতাংশ মানুষের বাজার দরের ওঠা-নামা হলো কি হলো না- তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কারণ, তাদের আয় এত বেশি যে- একটি ডিমের দাম যদি ৫০ টাকাও হয়, তাদের মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হবে না। আমাদের অর্থমন্ত্রীর ভাষায় ‘চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না।’

অপর দিকে গণতন্ত্রের চর্চাও অনেকটা আয়-ব্যয়ের মতো। কখনো চর্চাটা একজনের জন্য সীমাবদ্ধ থাকে; আরেকজনের জন্য পুরো উন্মুক্ত থাকে। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের ভাষায়- ‘গণতন্ত্র এখন বেদখল হয়ে গেছে’। দেশের জনগণই এখন বেদখল, অথচ সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। কিন্তু আজ বাজারদরের মতো সরকারি দল ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ছোটখাটো মহাসমাবেশ পুলিশের বেষ্টনীর মধ্যে হয়, বাজারদরে এ গণতন্ত্র মূল্যহীন। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা না থাকলে সেখানে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় না; তখন বাজারদরে গণতন্ত্রের কোনো মূল্য থাকে না।

দেশের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যে গরমিল তা পরিব্যাপক। আয় যদি ১০ শতাংশ বাড়ে তাহলে বাজারে তার তৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায় ২০ শতাংশ। কিছু দিন পর জিনিসের দাম বাড়ে দ্বিগুণ থেকে চার গুণ হারে। সোজা কথায় যার উত্তর- জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বাড়ছে, তাতে হিসাব মেলাতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। সাধারণ জনগোষ্ঠীর গত এক বছরে আয় যতটুকু বেড়েছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে- মাথাপিছু গড় আয় বাড়লেও তার সুফল পাচ্ছে না নিম্ন ও মধ্য আয়ের ১২ কোটি মানুষ। প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায়, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ক্যাবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সাধারণ মানুষের ব্যয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তাদের এ হিসাব শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত ব্যয়ের বাইরে। ক্যাবের প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, একটি পরিবারে প্রতিদিন দরকার হয় এমন সব পণ্যের দামই ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে ৫ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শাকসবজি, মাছ-গোশতের নাম রয়েছে দাম বেড়ে যাওয়ায় তালিকায়। শুধু চালের দাম ২০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব ধরনের শাকসবজির দরও বেড়েছে ২৪ শতাংশের বেশি। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, ৫৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া লবণ ও ভোজ্যতেলের মতো অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দরও বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ২০১৬ সালের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি। বাসাভাড়া বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি মাসেই পারিবারিক বাজেটে বাড়তি অংশ যোগ হচ্ছে। নিত্যপণ্যের মধ্যে শুধু আলু, মসুরডাল, ফার্মের মুরগির ডিম ও রসুনের দাম ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ সরকার অনবরত প্রচার করে যাচ্ছে, উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ এখন অবস্থান করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- উন্নয়ন শব্দটি বলতে আমরা কী বুঝি; এটা সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। বার্ষিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি, এসব উন্নয়নের ব্যাখ্যা জনগণের আয়-ব্যয়ের সাথে কতটা সম্পৃক্ত? সাধারণ মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে সারা দিনে যা উপার্জন করছে, তা দিয়ে তিন থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংসারের হাল ধরা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে কি না, সেটাই বিবেচ্য বিষয়। সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশের সম্পদ ক্রমান্বয়ে বাড়লেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। কারণ, তাদের সীমিত আয়।

তা ছাড়া, দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ সরকারি কর্মচারী নয়। হয় তারা বেসরকারি কোনো কোম্পানিতে চাকরি করে, না হয় তারা ভাসমান হকার, দিনমজুর বা ফুটপাথ ব্যবসায়ী। অর্থাৎ কৃষি শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি- এদের ব্যয় অনুযায়ী আয় বাড়েনি। এরাই পড়েছে বিপাকে। সরকার যদি তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চায়, তাহলে সাধারণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ, এদের ভোটেই একটি সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। কোনোভাবেই বিষয়টিকে তুচ্ছজ্ঞান করা যাবে না।

নির্বাচনী ইশতেহারে এই মাথামোটা সরকারই ১০ টাকার চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; কিন্তু ২০১৭-১৮ সালে আমরা কী দেখলাম- চাল কি কখনো ১০ টাকা হয়েছিল? রেশনের স্টাইলে ভ্রাম্যমাণ যানযন্ত্রে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো তামাশা আমরা দেখি; এটার সাথে গোটা বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করলে মহা ভুল হবে। খোলাবাজারে পণ্যমূল্য, চাল কত দামে বিক্রি হচ্ছে- সেটাই পর্যবেক্ষণে আনা উচিত। গোটা বিশ্বে এ নিয়মই চালু রয়েছে- আমরা এর বিপরীত হবো কেন। বর্তমান বাজারে চাল ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী একটু রসালো সুরে বলেছেন- চালের মূল্য ৪০ টাকাই যথার্থ। নির্বাহী প্রধান ইশতেহারে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন (২০০৮-২০০৯), তার সাথে বাণিজ্যমন্ত্রীর বর্তমান রসালো উক্তি নিয়ে ফেসবুকে নানা রকম বক্তব্য আমরা দেখতে পেয়েছি। এটা সরকারের জন্য সুখকর নয়। কথার সাথে কাজের মিল না থাকলে ধর্মীয়ভাবে তাকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ একে এভাবে বলেন- সকালে এক কথা, বিকেলে এক কথা। কথা একটাই- কিন্তু অনেক বেমিল।
লেখক : হারুন-অর-রশিদ, গবেষক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Bangla Photo News
Theme Customized By BreakingNews