1. rowshonsavar@gmail.com : admin2021 :
  2. rowshonsavar@gmail.com : Rowshon Ali : Rowshon Ali
October 29, 2025, 2:53 am

আইনের ফাঁকে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকের টাকা

  • আপডেট টাইম : Sunday, March 25, 2018
  • 310

বাংলা ফটো নিউজ : আইনগত কোনো বাধা না থাকায় একই পরিবার একাধিক শিল্প গ্রুপের মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা ঋণ আকারে বের করে নিচ্ছেন। আর ওই ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় একসময়ে তা ব্যাংকের বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। দেখা দিচ্ছে নগদ অর্থের সঙ্কট। কমে যাচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী গ্রুপের সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ণয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে গ্রুপের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর যদি একই ব্যক্তির প্রভাব থাকে এবং যদি একটি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেটা নিয়ম অনুযায়ী একই গ্রুপ হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে একাধিক গ্রুপ নিবন্ধন নেয়া হচ্ছে। বেশি ঋণ নেয়ার জন্যই ব্যবসায়ীরা এ কাজ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেহেতু গ্রুপের গুণগত বিষয় নির্ণয়ে আইনে সুস্পষ্ট মাপকাঠি নেই, এ কারণে সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী ও নিজের নামে আলাদা আলাদা শিল্প প্রুপ নিবন্ধন নিয়ে ব্যাংকের অর্থ বের করে নিচ্ছেন।

ব্যাংকের মূলধনে যা আছে : ব্যাংক ১০০ টাকা ঋণ দিলে ১ শতাংশ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৫ শতাংশ পর্যন্ত জেনারেল প্রভিশন রাখতে হয়। এ জেনারেল প্রভিশন সরাসরি ব্যাংকের মূলধনে যোগ হয়। আবার ব্যাংকের স্থায়ী সম্পদ ও সিকিউরিটিজের মূল্যায়নজনিত মুনাফাও মূলধন হিসেবে গণ্য হয়। অপর দিকে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এ অর্থও মূলধন হিসেবে যায়। ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ মুনাফা করে তার ২০ শতাংশ বাধ্যতামূলক বিধিবদ্ধ রিজার্ভ হিসাবে রাখতে হয়, যতক্ষণ না তা পরিশোধিত মূলধনের সমান হয়। এ অর্থও মূলধন হিসেবে ধরা হয়। আবার ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে জেনারেল প্রভিশন রাখতে হয়। শেয়ার প্রিমিয়ামও মূলধন হিসাবে রাখতে হয়। এর বাইরে ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড দেয়ার পর যে অংশটুকু হাতে থাকে সেটাকে রিটেইন আর্নিং বলা হয়। এটাও মূলধন হিসেবে ধরা হয়। সবমিলে কোনো ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা হলে সব মিলে মূলধন কোনো কোনো ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকা ছেড়ে গেছে।

যেভাবে বের করে নেয়া হচ্ছে ব্যাংকের অর্থ : বিধি অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান বা শিল্প গ্রুপ ব্যাংকের মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি ঋণ নগদে নিতে পারে না। এর বেশি নিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকও সীমাহীন ঋণের অনুমোদন দিতে পারে না। সর্বোচ্চ অনুমোদন দিতে পারে ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।

এখন কোনো ব্যাংকের মূলধন পাঁচ হাজার কোটি টাকা হলে কোনো একক শিল্প গ্রুপ নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও ২৫ শতাংশ হিসেবে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিতে পারে না। কিন্তু ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় থেকে একই পরিবরের একাধিক সদস্য যেমন- ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীর নামে আলাদা আলাদা গ্রুপের নিবন্ধন নিয়ে একাধিক গ্রুপ খুলছেন। আর ওই গ্রুপগুলোর বিপরীতে আলাদা আলাদাভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে। যেমন- কোনো ব্যাংকের মূলধন পাঁচ হাজার কোটি টাকা হলে একই পরিবার চারটি গ্রুপ খুলে ২৫ শতাংশ হিসাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকাই ঋণ নিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকের পুরো মূলধন বা তার বেশি অর্থ চলে যাচ্ছে একই ব্যবসায়ী গ্রুপের কাছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওই ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। ব্যাংকারদের সাথে যোগসাজশে কেউ খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। কেউবা ওঁৎ পেতে থাকছেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো সুবিধা দেয়া হয় কি না। যেমনÑ বছর দুই আগে ঋণ পুনর্গঠনের নামে ৫০০ কোটি টাকা এবং এক হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণখেলাপিদের ঋণ পনর্গঠনের নামে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। এক ও দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নবায়ন করে নেয় কিছু কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো কোনো সময় কোনো সুবিধা না পাওয়া গেলে উচ্চ আদালত থেকে ঋণখেলাপির ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ নিচ্ছেন। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি নতুন করে ঋণ নিতে পারেন না। অথচ আইনের ফাঁক গলিয়ে নতুনভাবে ঋণ নিয়ে আবার ঋণখেলাপি হচ্ছে কোনো কোনো বড় শিল্প গ্রুপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এভাবেই আইনের ফাঁকে ব্যাংকের টাকা চলে যাচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে দেয়া বড় অঙ্কের ঋণের বেশির ভাগই কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে কিছু শিল্প গ্রুপের হাতে। ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের একটি বড় অংশই হাতেগোনা কয়েকটি শিল্প গ্রুপের হাতে আটকে রয়েছে। ফলে কোনো কারণে একটি গ্রুপ সমস্যায় পড়লে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো ব্যাংকিং খাতে। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণের পাহাড় হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বড় বড় শিল্প গ্রুপ খেলাপি হয়ে যাওয়া। কোনো একটি গ্রুপ বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি হলেই ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় হাজার কোটি টাকার বেশি। একই কারণে ব্যাংকিং খাতে মূলধন ঘাটতি বাড়ার প্রবণতাও রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ সাত লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০০ ঋণ গ্রহীতার কাছেই রয়েছে এই টাকায় অর্ধেক। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। আবার এর মধ্যেও আবার শীর্ষ ২০ ঋণ গ্রহীতার কাছে রয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এভাবে গুটিকয়েক শিল্পগ্রুপের কব্জা থেকে ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাতে গ্রুপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে নতুনভাবে গ্রুপের সজ্ঞা নির্ণয়ের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর জন্য সার্কুলার জারি করা হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Bangla Photo News
Theme Customized By BreakingNews