বাংলা ফটো নিউজ : নৌ দুর্ঘটনার গত তিন মাসে ৩৩টি নৌ দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০টি দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত ও পাঁচজন আহত, ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও সাতজন আহত এবং মার্চে ১৭টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে আসে। কমিটির পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট দিতে গিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিন মাসে দুর্ঘটনাকবলিত নৌযানগুলোর অধিকাংশই পণ্যবাহী; যে কারণে প্রাণহানি কম ঘটেছে। তবে জানুয়ারি মাসে তিনটি পণ্যবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের ঘটনা খুব বেশি না ঘটলেও মাস্টার-ড্রাইভারদের (চালক) অদক্ষতা, নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে বেশ কয়েকটি লঞ্চ চরে আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে গত তিন মাসে সংঘটিত অধিকাংশ দুর্ঘটনাই চালকদের খামখেয়ালিপনা ও অদক্ষতার কারণে ঘটেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য তুলে ধরে দুর্যোগ মৌসুম বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় উপকূল, হাওর, দ্বীপাঞ্চল ও পাহাড়ী জনপদে নৌ চলাচল নিরাপদ রাখার দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সারা দেশে নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে শিমুলিয় ও পাটুরিয়ায় সেনা মোতায়েনসহ ১০টি সুপারিশ করেছে বেসরকারি সংগঠনটি। আজ
সোমবার সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে ‘চলমান দুর্যোগ মৌসুম, আসন্ন ঈদুল ফিতর ও নৌ নিরাপত্তা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম, শিশু সংগঠন খেলাঘরের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তাহ্মীন সুলতানা স্বাতী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ ইনল্যান্ড মাস্টার্স এসোসিয়েশনের (বিমা) সভাপতি ক্যাপ্টেন কাজী আব্দুল হক, পুরানা ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজিম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সঞ্জীব বিশ্বাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জসি সিকদার, নির্বাহী সদস্য মঈনউদ্দিন সেখ মোহন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নৌপথ ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দুর্যোগ মৌসুম ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যেই ইদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ফলে নৌপথের ওপর চাপ বহুগুণ বেড়ে যাবে। তাই নিরাপত্তার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয় পদ্মার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল নির্বিঘœ করতে পহেলা রমজান থেকে এ দুই স্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এর পাশাপাশি তারা অবিলম্বে সকল নদীবন্দর ও নৌপথে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম শুরু ও বছরজুড়ে অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেন। তারা অবৈধ ও ত্রুটিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধে উপকূলীয়, হাওর ও পাহাড়ী জনপদের জেলা পুলিশ প্রশাসনকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সম্পৃক্তকরণের দাবি জানান জাতয়ি কমিটির পক্ষ থেকে। নৌযানের ফিটনেস যথাযথভাবে পরীক্ষার জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিপ সার্ভেয়ার নিয়োগের দাবি জানান তারা। তারা বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম সারা বছর সচল রাখতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে অবিলম্বে আরও অন্তত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করতে হবে।
এছাড়া নৌ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের মামলাগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে অবিলম্বে সরকারি আইনজীবী নিয়োগ এবং বার কাউন্সিলের সনদবিহীন প্রসিকিউটিং কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনা থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
Leave a Reply