বাংলা ফটো নিউজ : অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে টানা চার দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে শুধু জরুরি বিভাগ, ডায়ালাইসিস ও টীকা কার্যক্রম ব্যতিত হাসপাতালের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা হাসপাতালে ঢুকতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে একদল শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভেতরে বসে আছে।
অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মেডিকেল কলেজটি পরিচালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা অনুযায়ী ২৭তম ব্যাচ পর্যন্ত ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ ছিল। কিন্তু মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ কোর্টে একটি রিট করে ১১০ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি চায়। নিম্ন আদালত প্রাথমিকভাবে ১১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির রিট আমলে নিয়ে অনুমতি দেয়। কোর্টের ওই প্রাথমিক অনুমতিতে মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ ১১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। মামলাটি উচ্চ আদালতে চলমান থাকলেও তেমন অগ্রগতি নেই। এদিকে গত ১৮ই অক্টোবর রেজিষ্ট্রেশনের তারিখ শেষ হয়ে যায়। ১১০ জন শিক্ষার্থীর কেউই রেজিষ্ট্রেশন করতে পারেনি। এছাড়া গত ২ নভেম্বর থেকে ১ম প্রফেশনাল পরিক্ষা শুরু হলেও কোন শিক্ষার্থীই পরিক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ফলে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিপাকে পরেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। তারা জানান, চিকিৎসার নিতে হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু গেইট থেকে বলা হলো হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। তাই ফিরে যাচ্ছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আইরিন সুলতানা বলেন, মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ আমাদের কাছে তাদের সমস্যা গোপন রেখে ভর্তি নেয়। ভর্তির দীর্ঘদিন পর আমরা জানতে পারি কতৃপক্ষ একটি রিটের প্রথম শুনানীর ওপর নির্ভর করে ৬০ জন শিক্ষার্থীর স্থানে ১১০ মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপিল করায় আমাদের সকলের রেজিষ্ট্রেশন আটকে যায়। আমরা মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।
শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহুরা বলেন, কতৃপক্ষ লিখিত দিয়েছিল আমরা গত ২ নভেম্বর পরিক্ষা দিতে পারবো। কিন্তু আমাদের পরিক্ষা দেওয়ার কোন ব্যবস্থা করেনি মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে গত তিন দিন ধরে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। আমরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটসহ সমস্ত গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। আমাদের সমসা সমাধান না করা পর্যন্ত আমরা জরুরি বিভাগ, টীকা কার্যক্রমসহ জরুরি তিন বিভাগ ব্যতিত সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আরেক শিক্ষার্থী নেসার উদ্দিন রাসেল বলেন, রেজিষ্ট্রেশন ও পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে আমরা চরম ভেঙে পরেছি। আমাদের মূহুর্ত অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নিয়ে কেউ ভাবছেন না। এই মুহুর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করলে আমাদের প্রত্যেকের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে গণস্বাস্ব্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি। আমরা সিট বাড়ানোর জন্য রিট করেছিলাম। এই রিটে আমাদের ১১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তিতে রায় দেন নিম্ন আদালত। এই রায়ের ভিত্তিতে আমরা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন আটকে যায়। তবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেঁচে থাকলে হয়তো এই সমস্যায় পড়তে হতো না। বর্তমানে হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা গত চার দিন ধরে আন্দোলন করছেন। এই মুহুর্তে কি কবরো বুঝে উঠতে পারছি না।
Leave a Reply