বাংলা ফটো নিউজ : নিজেকে সাধু দেখানোর জন্য সরকার বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নামে নাটক করেছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কোনো পরামর্শ নেয়ার সুযোগ না দিয়ে অপ্রস্তুতভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে আনা হয় বলে দলটির দাবি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়ে বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আনার সময় সম্পূর্ণ অপ্রস্তুতভাবে আনা হয়েছে। কারাগারে তার কক্ষের কাছে গিয়ে বার বার তাগিদ দিতে থাকে কর্মকর্তাসহ ৭/৮ জন কারারক্ষী। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসাপাতালে খালেদা জিয়াকে আনার সময় উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা ও সেখান থেকে ১৩ জনকে গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা টেলিভিশনে কাঁচের পর্দায় যতটুকু দেখেছি, আমাদের প্রিয় নেত্রীকে তো কখনো এভাবে দেখিনি, এই লেবাসে কখনো দেখিনি। একজন মুসলিম ধর্মপ্রাণ নারী হিসেবে ৩০-৩২ বছর ধরে খালেদা জিয়া শাড়ির ওপরে চাদর অথবা ওড়না পরিধান করেন। এ সরকার এত হীন এবং কুৎসিৎ মনোবৃত্তির যে একজন বয়স্ক নারী যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাকে চাদর অথবা ওড়না পরিধান করার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তাকে একরকম জোর করেই গাড়িতে ওঠিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে। পিজি হাসপাতালে ৫১২ নম্বর কক্ষে তাকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চিকিৎসার নামে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রহসনেরই নামান্তর। কোনো চিকিৎসাই সেখানে তাকে দেয়া হয়নি। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কোনো পরামর্শের সুযোগ দেয়া হয়নি। আইনেও আছে একজন বন্দী আগে যেসব চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতেন কারাগারেও তাদের চিকিৎসা নিতে পারবেন।
রিজভী বলেন, গত পরশু দিন (বৃহস্পতিবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত চিকিৎসকের দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে প্রধান কারারক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। অথচ এর কোনো প্রতিফলন আজকে দেখা যায়নি। বেগম জিয়া ১৫-২০ বছর ধরে যে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের চিকিৎসা নিচ্ছেন অথচ চিকিৎসকদের চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে গেলে সেখানে পরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত দেখা করতে দেয়া হয়নি। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে এসে টানা হেঁচড়া করা হয়েছে শুধু হেনস্থা ও হয়রানি করার জন্য। দেশনেত্রীর গাড়ি হাসপাতালে এসে পৌঁছলে তাকে একরকম টানা হেঁচড়া করে ওপরে উঠানো হয়। গাড়ি থেকে নামার জন্য সিঁড়ি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে হাসপাতালে ধাক্কাধাক্কির মতো পরিস্থিতিতে একরকম অপমানজনকভাবে তাকে হাসপাতালে ওঠানো ও নামানো হয়েছে। একজন মানুষ হিসেবে বেগম জিয়ার যে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সেটাকেও হরণ করতে ক্ষমতাতপস্বী সরকারপ্রধান বিষদাঁত লুকাতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, শাহাজাদা মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় নেতা মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভ, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, খন্দকার মাশুকুর রহমান, জাহানারা বেগম, ডা. মোফাখারুল ইসলাম রানা, ডা. জাহেদুল কবির, ডা. মো. জাফর ইকবাল, ডা. ওয়াসি খান জনি, ডা. মো. হুমায়ুন কবির প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নিজেকে সাধু দেখানোর জন্য সরকার বেগম জিয়ার চিকিৎসার নামে নাটক করেছে। আওয়ামী রাজত্বের ছাইপাশের সাথে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান, দফতর, সেবা বিভাগ বলপূর্বক হরণের ধারায় বেঁধে ফেলা হয়েছে বলেই সরকারি হাসপাতালে বিরোধী দলের সেবা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই সুযোগ ও অধিকারহীনতার শিকার হলেন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি চিকিৎসা বিষয়ে সরকার যে বায়েস্কোপ দেখালো তার নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। দেশনেত্রীর প্রতি সরকারের এ বাতিকগ্রস্ত উদ্ভট আচরণের তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ধারাবাহিকতা বন্ধ না করলে কোটি কন্ঠের হুঙ্কারে এ সরকারের গদিকে উল্টে দিতে জনগণ প্রস্তুত। সুচিকিৎসার অভাবে দেশনেত্রীর কোনো ক্ষতি হলে এর চরম দায় সরকারকে নিতে হবে। অত্যাচার নিপীড়ন জুলুমের তীব্র কষাঘাত ও স্বামীহারা সন্তানহারা এক সর্বংসহা নারী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অটুট মনোবলে সব ধৈর্য ধারণ করেছেন দেশমাতৃকা ও জনগণের প্রতি অঙ্গীকারে। বেগম জিয়ার অগ্রযাত্রায় বলপূর্বক প্রতিহত করে কোনো লাভ হবে না। তাকে কোনোভাবেই টলানো যাবে না। অদৃশ্য গণতেন্ত্রর পুনরুজ্জীবন করতে তিনি ধ্রুব তারার মতো স্থির অবিচল লক্ষে সকল বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাবেন বলে রিজভী মন্তব্য করেন।
এদিকে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাসপাতালে আনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং শাহবাগ এলাকায় ছুটে আসেন। অনেকে হাসপাতালের ভেতরে খোলা জায়গায় অবস্থান নেন। র্যাব-পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য সেখানে জড়ো হন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, খন্দকার মাশুকুর রহমান, ছাত্রদলের আলমগীর হাসান সোহান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, মফিজুর রহমান আশিক, আবুল হাসান, মনিরা পারভীন রিক্তা, শওকত আরা ঊর্মি, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, আরিফা সুলতানা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপন, নাসিমা আক্তার কেয়া, আবদুস সোবহান স্বপন প্রমুখ। এছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের হাজারো নেতাকর্মী হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply