বাংলা ফটো নিউজ : বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে আগামীতে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেয়া হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট জেলা রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে তারা এই হুঁশিয়ারি দেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি।
নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠের চারপাশ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ভেবেছিল বেগম খালেদা জিয়াকে জেল খানায় বন্দি রেখে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা ব্যুমেরাং হয়েছে। তিনি সরকারকে অবিলম্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের ‘এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার তুই কবে যাবি?’
‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি?’ ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ’। দলের নেতাকর্মীদেরকে আগামীদিনে আন্দোলনের জন্য আবারো প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম খালেদ জিয়াকে মুক্ত করা হবে এবং তার নেতৃত্বেই বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তাকে ছাড়া দেশে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইনের সভাপতিত্বে এবং সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুল হক আসপিয়া, ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরফত আলী সপু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, শাম্মী আক্তার, এম নাসের রহমান, আলহাজ্ব সুফিয়ান, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি, সিলেট বিএনপির নেতা এম নুরুল হক, কায়সার আহমেদ ঝন্টু, আব্দুল গফফার, সুনামগঞ্জের নুরুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের মিজানুর রহমান, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউছ, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপির এটিএম বেলায়েত হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, যুবদলের নূরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, সিলেট যুবদলের ইকবাল বাহার চৌধুরী, সিলেট ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমেদসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছিল গতকাল। পুলিশি বাধা, হামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে জনসভায় যোগ দেয় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। সিলেট মহানগর ও জেলা, হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার, সুনামগঞ্জ জেলা থেকে জনগণ দুপুরের আগেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। অনেকে আবার আগের দিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেও সিলেট শহরে অবস্থান নেন। আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়া সকলেই ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দিবো না’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে। আগন্তুকদের হাতে ছিল ধানের শীষ এবং জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি-সংবলিত ফ্যাস্টুন।
সরকার ফের একদলীয় নির্বাচন করতে চায় মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার বিএনপি এবং খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ওই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সুতরাং বর্তমান সরকার অনির্বাচিত এবং সংসদ অবৈধ। কেননা এই সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম ও সংবিধান রক্ষার নির্বাচন বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। বিদেশী বন্ধুদের সাথেও প্রতারণা করেছে। এজন্যই সরকার জনগণকে ভয় পায়। কিন্তু জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগের পাত্তা থাকবেনা। তাদেরকে জনগণ বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার ভেবেছে খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ব্যুমেরাং হয়েছে। খালেদা জিয়া আজকে দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী উপাধি পেয়েছেন।
আজকে তাকে নিয়ে শুধু দেশবাসী নয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দও উদ্বিগ্ন। আমরা নেতৃবৃন্দ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশে দল পরিচালনা করছি।
তিনি বলেন, সরকার বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও প্রশাসনকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এই সরকার গুম, খুন, অপহরণ এবং টাকা লুট করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারের স্বীকৃতি পেয়েছে। সিলেটের কৃতি সন্তান বিএনপির নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর সন্ধান নেই। তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলন করবো।
কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। আক্রমণ করা হচ্ছে। দেশকে মেধাশূন্য করা হচ্ছে। আসলে কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক। এ ব্যাপারে আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুই বছর আগে ‘ভিশন-২০৩০’ তে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ কমূসচিতে বাধা দিচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভয় পায় বলে তাকে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। কয়েকদিন আগে তাকে পিজি হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার চেহারা দেখে মনে হয় বিন্দু মাত্র মনোবল ভাঙ্গেনি। ম্যাডাম খালেদা জিয়া বলেছেন , গণতন্ত্র উদ্ধার করতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। তিনি বলেন, স্বৈারচার আর গণতন্ত্র এক সাথে চলতে পারে না। দুর্নীতি করেছে তার জবাব দিতে হবে। এই সরকারের অত্যাচার হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া বন্দি মানে গণতন্ত্র বন্দি। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আইনীভাবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে দুই মাস আগেই মুক্তি পেতেন। তাকে মুক্তি করতে হলে যারা তাকে বন্দি করে রেখেছে তাদের পতন ঘটাতে হবে। এরশাদকে যেভাবে পতন ঘটানো হয়েছিল শেখ হাসিনাকে হটাতে সে পথে যেতে হবে। অন্যথায় গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকারের ভিত্তি নাই। তারা অবৈধ পন্থায় সরকার গঠন করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হারানো গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবো। আওয়ামী লীগকে বলবো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাদ দিয়ে রাজপথে আসুন, আমরা আপনাদের রাজপথে মোকাবেলা করবো।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের মা কে আজকে সরকার বন্দি করে রেখেছে। গণতন্ত্রের মা কি কারাগারে থাকে পারে? গণতন্ত্র সাগরের মতো সাগরকে কেউ বাধ দিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারে না। সাগর আজকে জেগে উঠেছে। সাগরের এই পানি দুর্নীতিবাজ আর খুনিদের ভাসিয়ে দিবে। মো: শাহজাহান বলেন, খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে সরকার আমাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছে। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট থেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু হবে। এরমাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হবে। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখার মতো কারাগার দেশে তৈরি হয়নি।
Leave a Reply