বাংলা ফটো নিউজ : টানা ১৭ বছর পর চরম সংকটে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে আওয়ামী লীগ। দেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী কারাগারে এবং অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঈদ করতে অনেকে এলাকায় গিয়ে গ্রেফতারও হয়েছেন। এরই মধ্যে বিদেশে বসে অনেক নেতা রাজকীয় ঈদ উদযাপন করেছেন। তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে এবার কফির আড্ডায় দেখা গেছে আওয়ামী লীগের পলাতক চার মন্ত্রীকে। তারা হলেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক নৌমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতারা।
কর্মীরা বলছেন, ঈদ তো সবার জন্যই। নেতারা যে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন না, তা নয়। তবে তাদের সঙ্গে কর্মীদের যোগাযোগ ও সুখ-দুঃখের বিনিময় হলে ভালো হয়। কর্মীরা প্রাণ পায়। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ নেতাকর্মী তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখছেন না। সহযোগিতা তো পরের ব্যাপার।
আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী এবার ঈদের নামাজটাও পড়তে পারেননি। নতুন প্রজন্মের অনেক নেতাকর্মীর কাছে এটি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা। সংগ্রাম ত্যাগ আর ক্রোধ মনে নিয়েই একটি প্রজন্ম লড়াই করছে সেই সাথে আছে পূর্ব প্রজন্মের পূর্ব পুরুষদের লড়াই সংগ্রাম। এই সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিদেশে অবস্থান করছেন অনেকেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হয়ে কারও কারও যদি হাস্যোজ্জ্বল গেটটুগেদারের ছবি আসে তাহলে তৃণমূল এতে ব্যথিত হয় ও প্রতিপক্ষে ভুল বার্তা পৌঁছায়।
তবে নেতাদের দাবি, বিপদে তো সবাই। যে যত বড় নেতা, বিপদ তার তত বেশি। দেশ-বিদেশে যে যেখানেই আছে, চরম বেকায়দায় আছে। তার পরও সাধ্যমতো সংযোগ রক্ষা করা প্রয়োজন। আমাদের অনেকেই সেটা করছেন না। এ কারণে কর্মীদের ক্ষোভ অমূলক নয়। তবে দলীয় সভাপতি নিজেই সবার সঙ্গে কানেক্টেড, এটাই আমাদের আশার দিক।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য শেখ রাসেল বলেন, ‘ঈদ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব এবং আনন্দের দিন। হোক সেটা দেশে কিংবা বিদেশে অবস্থান করা অবস্থায়। জুলাই আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বিদেশে অবস্থান করছেন তাই বলে কি তাদের জীবনে ঈদ আসবে না বা তারা ঈদের আনন্দ করতে পারবে না বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু তাদের উচিত শুধু ঈদের সময় কেন, সব সময় দলের কর্মী এবং দেশবাসীর খোঁজখবর নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু কোনো নেতা যদি এমনটি না করেন তাহলে আমি বলবো তারা নেতা নন। তারা হলেন নেতারূপী দানব। ভবিষ্যতে দলের কর্মীরা এবং দেশবাসী এই নেতারূপী দানবদের পরিহার করে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির আরেক সদস্য ফুয়াদ আদনান বিন জামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী এবার ঈদের নামাজটাও পড়তে পারেননি। নতুন প্রজন্মের অনেক নেতাকর্মীর কাছে এটি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা। সংগ্রাম ত্যাগ আর ক্রোধ মনে নিয়েই একটি প্রজন্ম লড়াই করছে সেই সাথে আছে পূর্বপ্রজন্মের পূর্বপুরুষদের লড়াই সংগ্রাম। এই সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিদেশে অবস্থান করছেন অনেকেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হয়ে কারও কারও যদি হাস্যোজ্জ্বল গেটটুগেদারের ছবি আসে তাহলে তৃণমূল এতে ব্যথিত হয় ও প্রতিপক্ষে ভুল বার্তা পৌঁছায়। সময়টা এখন বৈরী অতএব এসময়ে সংযমী হওয়াই শ্রেয়।’
যারা কর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছে না, বিদেশে বসে রাজকীয় জীবন কাটাচ্ছে। ঈদে বা এই বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছে না, তাদের আর এই সংগঠনে দেখতে চাই না। তারা কখনো বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার সাথে সাথে যেন আইনের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং দুর্নীতির জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয় সব কর্মীর স্লোগান একটাই মৃত্যুদণ্ড। কারণ তাদের কারণে সংগঠন, দেশ এবং ৭১ আজ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।
যুবলীগ নেতা শামসুল কবির রাহাত বলেন, যেখানে বেশির ভাগ কর্মী দেশে থেকে ঈদের নামাজ পড়তে যেতে পারেননি। সেখানে যারা বিদেশে বসে এসব কর্মকাণ্ড করেছেন তাদের দেখে কর্মীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।
Leave a Reply